করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিতে পারবে। তবে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনরায় ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনও ফি নেওয়া যাবে না, বা নিলেও তা ফেরত দিতে হবে।
এ নির্দেশনা মানছেন না বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিযোগের পাহাড় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যাক্তি বিশেষের প্রভাব দেখানো হচ্ছে যা কোনভাবেই অভিভাবক মহল সহজভাবে মেনে নিতে পারছেননা। অমুক ভাই স্কুলের রাজনৈতিক পরিচয়ে তমুকপদে আসীন,এই পরিচয়ে গর্বিত স্কুল প্রধানরা।
এইদিকে বুধবার (১৮ নভেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরিত করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি নিতে পারবে।
কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না। কেউ এ সংক্রান্ত অর্থ আদায় করলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফি’র সঙ্গে সমন্বয় করবে। এছাড়া অন্য কোনো ফি আদায় করা হলে তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফি’র সঙ্গে সমন্বয় করবে।
এছাড়া মহামারির মধ্যে যেসব অভিভাবকের আয় কমে গেছে বা যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সন্তানদের টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে মাউশি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে যত্নশীল হতে হবে।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মত সব ধরনের ‘যৌক্তিক’ ফি নেওয়া যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকেরা করোনাকালে শিক্ষা ফি কমানোর দাবি করে আসছেন। কিন্তু অভিভাবকেরা বলে আসছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের অনুরোধ রাখছে না।
মাউশির বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকদের মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু অভিভাবক বলছেন, একদিকে স্কুল বন্ধ ছিল আর অন্যদিকে করোনার সময় তাঁরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অতএব তাঁদের পক্ষে টিউশন ফি দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও স্কুল রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতি মাসে তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেই হয়।
মাউশি বলছে, এ অবস্থায় অভিভাবকদের অসুবিধার কথা ভাবতে হবে, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে না যায় কিংবা বেতন না পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন যেন সংকটে না পড়ে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের শুরুতেও যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন কোনো ফি, যেমন টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন ফি নেবে না, যা ওই নির্দিষ্ট খাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারবে না।