এসএসসি পরীক্ষার্থী মুসহাব আহমেদ হিশামের কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল পরীক্ষার পর। সেখানে তার মা থাকেন বোনের সঙ্গে। তার কানাডা যাওয়ার সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষা যত ঘনিয়ে আসছিল বন্ধুদের কাছ থেকে তার বিদায় নেওয়ার সময়ও হয়ে আসছিল।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। মায়ের কাছে আর যাওয়া হলো না হিশামের।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় হিশাম নিহত হয়েছেন।
হিশাম ছিলেন হাটহাজারী উপজেলার কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। চার ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।
হাটহাজারীতে চাচার বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন হিশাম। হাটহাজারীর যুগিরহাটে আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারে পড়তো সে। কোচিংয়ের আরও সহপাঠীদের সঙ্গে গিয়েছিল পিকনিকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। সেখান থেকে ফেরার পরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
হিশামের মা-বোন কানাডায় থাকেন। বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়। এসএসসি পরীক্ষার পর হিশামের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। পরিবারের অনুপস্থিতিতে থাকতেন চাচা আকবর হোসেন মানিকের কাছে।
তিনি বলেন, হিশামকে তার মা আমার কাছে আমানত দিয়ে গেছে। তিন বছর ধরে আমার কাছে ছিল। দুর্ঘটনায় হিশাম চলে গেল, এখন আমি হিশামের মায়ের কাছে কি জবাব দেব?
ভাতিজা হিশামের পড়ার টেবিলে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন চাচা আকবর হোসেন মানিক। তিনি বলেন, ভাতিজা ঘুরতে যাওয়ার আবদার করায় না করিনি। বাসা থেকে যাওয়ার আগে কি কাপড় পরবে জিজ্ঞেস করেছিল। খৈয়াছড়া পৌঁছে আমাকে কল দিয়েছিল। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।তিনি বলেন, ভাইয়ের ছেলে হলেও সে আমার নিজের ছেলের চেয়ে বেশি ছিল। তিন বছর আগে তার মা কানাডা চলে যায়। এরপর থেকে হিশাম সারাক্ষণই আমার সঙ্গে থাকত। মা, ভাই, বোন কেউ না থাকলেও কখনও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করেনি। তার সবকিছু ছিল গোছানো।
আকবর হোসেন বলেন, হিশামকে কানাডা নেওয়ার জন্য তার মা কাজ শুরু করেছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, হিশামের বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা মোজাফফর আহম্মদ মারা যান। তারা দুই বোন দুই ভাই। হিশাম সবার ছোট। বড় ভাই জিহাদ আহম্মদ স্পেনে থাকে। মা জাহেদা বেগমের সঙ্গে সাজিয়া আফরিন জুমু কানাডায় থাকে। এক বোন রিফাত আফরিন জয়া ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার।
হিশামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে।
হিশামের চাচা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গতকাল রাতে তার মাকে মৃত্যু সংবাদটি জানানো হয়েছে। এরপর থেকে তার মা জাহেদা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
শনিবার সকালে কে এস নজু মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হিশামের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।