বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে দেশে সম্প্রতি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য; নির্মানের আরও অনেক আগে। প্রশ্ন এখন এ কেবল মৌলবাদি শক্তির উত্থান নয়তো!
ভাস্কর্য বিতর্ক ওঠায় সঙ্গতকারণে প্রশ্ন জাগে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যই কি দেশে প্রথম? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ভাস্কর্য নির্মাণের আছে দীর্ঘ ইতিহাস। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের প্রতিকৃতি নির্ভর ভাস্কর্যগুলোর সংখ্যাও কম নয়।
অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবিকরা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক প্রকাশ্যে এই বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পর সংগঠনটির নবনির্বাচিত আমির জুনায়েদ বাবুনগরীও শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের এক সমাবেশে ভাস্কর্য-বিরোধী অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এর ঢেউ এখন সংক্রমিত করছে অন্য ইসলামি দলগুলোকেও।
ধর্মীয় সংগঠনগুলো জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দিলেও দেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যও আছে। দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের আগেই জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জিয়াউর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট সাউসে নিহত হন। ব্রিটিশ আমলে তৈরি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসকে ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করে।
তৎকালীন অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এ ভাস্কর্য রক্ষাসহ জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে গত ১৪ বছরে অন্তত ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বর্তমান সরকার। জানা যায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে এ ভাস্কর্যটি স্থাপন করে নতুন আঙ্গিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর-এর সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় জাদুঘরের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এ জাদুঘরের জন্য চলতি অর্থবছরেই বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ কোটি ৫ লাখ। সে হিসাবে গত ১৪ বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা এ ভাস্কর্যসহ জাদুঘরের পেছনে ব্যয় করেছে বর্তমান সরকার।
এছাড়াও ২০০১-২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় খাগড়াছড়ি শহরের মুসলিমপাড়া মোড়ে জিয়াউর রহমানের আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপন করেন বিএনপির তদানীন্তন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুঁইয়া। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও গুরুত্বপূর্ণ দিনে এই ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রশাসনের সহাবস্থান নীতির কারণে এ শহরে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি জিয়ার ভাস্কর্যটিও অক্ষত আছে।
ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের। তারও অনেক আগে এই বাংলার গর্ব মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ আরও অনেকের ভাস্কর্য রয়েছে এই বাংলায়।
প্রসঙ্গত বলা যায়, হঠাৎ কেন ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন! কেন এ রাজনীতি! কার স্বার্থে!