করোনা আতঙ্ক নয় সচেতনতার বিষয়। করোনা ভাইরাস-বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এক মহামারী। পুরো পৃথিবী এমন বিপদে পড়েছিলো সবশেষ কবে তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হতে পারে। তবে মূলকথা হলো পৃথিবীর সামনে এখন বাঁচা মরার লড়াই। আর এ লড়াইয়ে জিততে হলে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। সবারই রয়েছে কিছু করণীয়- একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার ১৪নং শিকারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দীকি।
সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও ঘনীভূত হচ্ছে করোনা আতংক। যত দিন গড়াচ্ছে, করোনা ভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্থ হচ্ছে গোটা দুনিয়া। বাংলাদেশে আতংক ছড়িয়েছে বেশি; সতর্কতা কম। রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা বলে জানান ১৪নং শিকারপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।তিনি আরও বলেন, আমাদের বিমান বন্দর, স্থল বন্দর, সমুদ্র বন্দর গুলো এখনও সুরক্ষিত বলা যাবে না। কারা আসছে? কোথা থেকে আসছে? ট্রানজিট হয়ে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসছে কিনা তা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
না আতঙ্ক ছাড়ানোর জন্য বলছি না। ইতালি যে ভুল করেছিল আমরা সে ভুল যেন না করি। শুধু টিভি বা খবরের দর্শক হয়ে নয়, কিছু করার আবেদন এটা। হোয়াটস্যাপ বা ফেসবুকের ভুয়া খবর নয়, বরং সচেতনতা ছড়ান। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে মাত্র দুই সপ্তাহ যদি আমরা ঘরবন্দি হয়ে থাকি তাহলে আমাদের অবস্থা ইতালি বা ফ্রান্সের মত হবে না।
ইতালি, ইরান, ফ্রান্স অনেক দেরিতে করেছে, আমাদের হাতে এখনো কিছুটা সময় আছে। দুই সপ্তাহ ঘোরা-বেড়ানো বা অদরকারি কাজগুলোকে মুলতুবি রাখুন। একসপ্তাহ ছুটি কাটান ঘরে বসে, অযথা দোকান বাজার ছোটাছুটি করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। এই এক দু সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুসপ্তাহ পর হয়ত সেলফ কোয়ারেন্টাইনের আর কোনো প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না। প্রকোপ একেবারে কমে যেতে পারে, নইলে হয়ত ঘরে বসে বসেও আক্রান্ত হতে পারেন।
আবু বক্কর সিদ্দীকি বলেন আসুন, আমরা আগামী দু-সপ্তাহ মাত্র তিনটে কাজ করি। বেশি না, তিনটি কাজ, হয়তো পাল্টে যেতে পারে আমাদের দেশের দৃশ্যপঠ।
এক-খুব জরুরি না হলে বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দিই। বন্ধ মানে বন্ধ। পাড়ার দোকানটুকুও নয়। আত্মীয় বন্ধু প্রতিবেশী কারোর বাড়ি যাবেন না, তাদেরও নিজের বাড়িতে ডাকবেন না। যেখানে ভিড় বেশি, লোক জমায়েত হয়েছে সে জায়গা এড়িয়ে চলুন, সে শপিং মল হোক কি ধর্মীয় স্থান। দুসপ্তাহ সেদ্ধ ভাত খেয়েই চালিয়ে নিই। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ মজুত আছে দোকানে। বিরিয়ানি মশলা কিনতে না বেরোনোর প্রতিজ্ঞা করি।
দুই- সাধারণ হাইজিন মেনে চলি। খাবার আগে এবং ঘণ্টায় অন্তত একবার করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি। নাকে-মুখে হাত যথাসম্ভব কম দিই।
তিন- আমি একা কি করব? সবাই তো মানছে না – এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনার মাধ্যমে যদি একজনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে হল আপনার প্রিয়জন। বাবা-মা-স্বামী-স্ত্রী-সন্তান। যার সঙ্গে আপনি দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন তাকে আপনিই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো? বয়স্ক মানুষ ছাড়াও যাদের হাইপ্রেসার, সুগার, হার্টের অসুখ, কিডনি, ক্যান্সার বা অন্য কোনো সাধারণ ক্রনিক রোগ আছে, করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাঁদেরও মৃত্যুর হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তিনটি বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাইরে না বেরোনো। কতদিন না বেরিয়ে সম্ভব? ঠিক দু-সপ্তাহ। আপনি হয়ত স্ট্রং, সাধারণ ফ্লুয়ের উপসর্গও নেই। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও আপনি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু চৌদ্দদিনের মধ্যে আপনি যদি কোন অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসেন তাহলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে। এটা ভেবে শিক্ষিত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যদি এটুকু মেনে চলে তাহলেই আমরা নিরাপদ থাকব।
আসুন দেখিয়ে দিই, প্রথম বিশ্বও যেটা পারেনি, আমাদের গরিব দেশ সেটা করে দেখিয়েছে।
অধিকাংশই শুনছে এ ভাইরাসে মানুষ মারা যায়। সতর্কতার বিষয়ে জানে কম। এদেশে এ ভাইরাস নিয়ে আতংক আছে বেশ, সতর্কতা নেই। এটা ভয়ানক বিষয়।
তিনি দল-মতের উর্ধে থেকে দেশ-বাসীর কাছে আহ্বান জানান, ঘরে থাকুন-নিরাপদ থাকুন, নিজে বাচুঁন-অন্যকে বাচাঁন। সুস্থ থাকুন-হাসি খুশি থাকুন।